বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি ‘গ’ ইউনিট অংশীদারি ব্যবসায়

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় প্রাকটিসের বিকল্প নেই। তাই তোমাদের ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের জন্য ব্যবসায় সংগঠন বিষয়ের অংশীদারি ব্যবসায় অধ্যায় নিয়ে আলোচনা করলাম। এছাড়া তোমরা আমাদের ওয়েবসাইটে মডেল টেস্ট দিয়ে নিজেকে যাচাই করতে পারবে।
এখন চলো আমরা অংশীদারি আইন নিয়ে পড়াশোনা করি

অংশীদারি আইন

◾অংশীদারি ব্যবসায়ের সংজ্ঞা হলো — ”সকলের দ্বারা বা সকলের পক্ষ থেকে একজনের দ্বারা পরিচালিত মুনাফা নিজেদের মধ্যে বণ্টনের নিমিত্তে কতিপয় ব্যক্তিবর্গের মধ্যে যে চুক্তিবদ্ধ সম্পর্কের সৃষ্টি হয় তাকে অংশীদারি ব্যবসায় বলে” — অংশীদারি আইন ১৯৩২ ৷
◾ভারতীয় উপমহাদেশে অংশীদারি আইন পাশ করা হয় —– ১৯৩২ সালে ৷
◾বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত অংশীদারি আইন — ১৯৩২ সালের৷ (ভারতীয় অংশিদারি আইনটিকেই বাংলাদেশেই আইন হিসেবে গন্য করা হয়) ৷
◾ভারতীয় অংশীদারি আইন ১৯৩২ তৎকালীন ভারতে বলবৎ করা হয় —- ১ অক্টোবর ১৯৩২ সালে ৷
◾ভারতীয় অংশীদারি আইনকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশের আইন হিসেবে গৃহীত হয় — ১৯৭২ সালে।

◾ভারতীয় অংশীদারি আইনে হিন্দু পারিবারিক ব্যবসায় বা বার্মার স্বামী-স্ত্রী যৌথ পারিবারিক ব্যবসায়কে অংশীদারি ব্যবসায় হিসেবে গণ্য করা হয়নি ৷

অংশীদারি ব্যবসায়:

◾১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের ৪ ধারা অনুযায়ী —- “সকলের দ্বারা বা সকলের পক্ষ থেকে একজনের দ্বারা অংশীদারি ব্যবসায় পরিচালিত” ৷
◾সামাজিক কোনো কাজ হতে প্রাপ্ত আর্থিক লাভ — অংশীদারিত্বের আওতাভুক্ত নয় ৷
◾বলা হয় —- অংশীদারি ব্যবসায়কে ৷
◾অংশীদারি ব্যবসায়ের নামের শুরুতে “মেসার্স” শব্দ যোগ করা বাধ্যতামূলক ৷ এছাড়া নামের শেষে এন্ড কোং; ব্রাদার্স; এন্ড ব্রাদার্স; এন্ড সন্স ইত্যাদি লেখা হয় ৷ যেমন: মেসার্স আবেদ ব্রাদার্স; মেসার্স রবিন এন্ড কোং; মেসার্স আলম এন্ড সন্স ইত্যাদি ৷ অবশ্য সীমিত অংশীদারি কারবারের নামের ক্ষেত্রে সীমিত; লিমিটেড; লি: লিখতে হবে৷ যেমন: মেসার্স আবেদ এন্ড কোং লি:, মেসার্স রবীন এন্ড সন্স লিমিটেড ইত্যাদি ৷
◾কোনো অংশীদার অবসর গ্রহণ করতে চাইলে অন্যান্য অংশীদারদের জানাতে হয় —- কমপক্ষে ৯০ দিন পূর্বে।
◾অংশীদারি ব্যবসায় প্রত্যক্ষভাবে আইনভিত্তিক নয়। তবে পরোক্ষ ভাবে আইন সমর্থন বজায় থাকে।
◾অংশীদারগনণ তাদের মালিকানা অবাধে হস্তান্তর করতে পারে না। তবে সকল অংশীদারের সম্মতিক্রমে তা হস্তান্তর করা যায়।
◾হিন্দু যৌথ পারিবারিক ব্যবসায় পদমর্যাদা দ্বারা সৃষ্ট। তাই এটা অংশীদারি ব্যবসায় নয়।
◾একটি অংশীদারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে — অংশীদারদের সাধারণ উদ্দেশ্য থাকবে এবং একে অন্যকে বিশ্বাস করবে।

অংশীদারি দলিলে উল্লেখ না থাকলে-

লাভ-ক্ষতি বণ্টিত হবে সমহারে
মূলধনের উপর সুদ ধরা যাবে না
অতিরিক্ত মূলধনের উপর সুদ ধরা যাবে না
উত্তলনের উপর সুদ ধরা যাবে না
ঋনের উপর 6% হারে সুদ ধরতে হবে

অংশীদারি ব্যবসায়ের সদস্য সংখ্যাঃ

  • সাধারন অংশীদারি ব্যবসায়ের সদস্য সংখ্যা হলো — সর্বনিম্ন ২ জন ও সর্বোচ্চ ২০ জন।
  • ব্যাংকিং অংশীদারি ব্যবসায়ের সদস্য সংখ্যা হলো — সর্বনিম্ন ২জন ও সর্বোচ্চ ১০ জন।
  • সীমিত অংশীদারি ব্যবসায়ের সদস্য সংখ্যা হলো — সর্বনিম্ন (২জন সাধারণ +১জন সীমিত=৩জন) ৩জন ও সর্বোচ্চ ২০ জন।
  • সীমিত অংশীদারি ব্যবসায়ের সীমিত অংশীদারের সদস্য সংখ্যা হলো — সর্বনিম্ন ১জন ও সর্বোচ্চ ৩জন।
  • সীমিত অংশীদারি ব্যবসায়ের সাধারণ অংশীদারের সদস্য সংখ্যা হলো — সর্বনিম্ন ২জন ও সর্বোচ্চ ১৯ জন।

◾অংশীদারি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানে সদস্য ১০ জনের বেশি হলে প্রতিটি সদস্যকে জরিমানা করা যায় — সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা করে।
◾অংশীদারি ব্যবসায়ের সর্বোচ্চ সদস্য সংখ্যা সম্পর্কে — অংশীদারি আইনে কোনোকিছু বলা নেই।

অংশীদারি চুক্তি

◾অংশীদারি সম্পর্ক চুক্তির মাধ্যমে জন্মলাভ করে, সামাজিক মর্যাদা বলে নয় — উল্লেখ আছে অংশীদারি আইনের ৫ ধারায়।
◾অংশীদারি ব্যবসায়ের মূল ভিত্তি চুক্তি।
◾চুক্তি ছাড়া অংশীদারি ব্যবসায় — সম্ভব নয়।
◾চুক্তিপত্র ছাড়া অংশীদারি ব্যবসায় — সম্ভব।
◾চুক্তি হতে পারে তিন রকমঃ
১। লিখিত ২। মৌখিক ৩। লিখিত ও নিবন্ধিত
◾লিখিত চুক্তি কে বলা হয় — Deed বা চুক্তিপত্র।
◾লিখিত ও নিবন্ধিত চুক্তিপত্র — অধিক আইনগত মর্যাদা লাভ করে (আদালত কর্তৃক গৃহীত হয়)।
◾লিখিত ও নিবন্ধিত চুক্তিপত্রকে আদালত — প্রমাণ হিসেবে গ্রহন করে।
◾চুক্তিপত্রের অবর্তমানে কার্যকর হয়— অংশীদারি আইন।
◾নিবন্ধিত অংশীদারি চুক্তিপত্রের যে-কোনো পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংশোধন করতে হলে অবশ্যই — নিবন্ধককে জানাতে হবে।
◾অংশীদারি চুক্তিপত্র —- প্রচারযোগ্য পত্র নয়৷
◾চুক্তিতে উল্লেখ থাকলে নতুন অংশীদার পুরাতন অংশীদারের দায় — বহন করবে৷

অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন

◾অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন সম্পর্কে বলা হয়েছে —- ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের ৫৮ ধারায়৷
◾অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধিত বিষয়বস্তুর পরিবর্তনের পদ্ধতি সম্পর্কে বলা আছে —- অংশীদারি আইনের ৬০ ও ৬১ ধারায়৷
এই অধ্যায়ের বাকি অংশ খুব দ্রুত পাবলিশ করা হবে।

প্রিয় শিক্ষার্থীরা,
এই লেখাটি বারবার পড়বে এবং প্রাকটিস করবে।
মানুষ মাত্রই ভুল। আমাদের কোনো লেখায় ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে এবং তোমরা যদি কোনো ভুল পাও সেগুলো কমেন্টের মাধ্যমে জানাবে।