ইংরেজি শেখার সহজ উপায় জানতে চায়না এমন মানুষ খুব কমই আছে। শুধু ইংরেজী কেন, অন্য যে কোন বিদেশী ভাষা শিখতে গেলে বেশ কষ্টসাধ্য বলেই মনে হয়। এ জন্য বলতে গেলে প্রথম শ্রেণী থেকে শুরু করে মাস্টার্স পর্যন্ত কম বেশি ইংরেজী বিষয় থাকার পরও আমাদের শিক্ষার্থীদের দেখা যায় তারা ইংরেজী ভাষায় আশানুরূপ দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না।
আজকে অবশ্য এর কারণ বের না করে বরং কিভাবে এই ইংরেজী ভীতি দূর করে ভালভাবে এই ভাষায় দক্ষতা অর্জন করা যায় সেদিকে আলোকপাত করার চেষ্টা করব।
এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করতেই হচ্ছে তা হল, আমি সেই পদ্ধতি গুলোই বেশি জোর দিচ্ছি যা আমি নিজে অনুসরণ করেছি।
১) পড়ার কোন বিকল্প নেইঃ
অনেকেই হয়ত ভাবছেন আমি কোন সহজ বা শর্টকার্ট পদ্ধতি দেখিয়ে দিব, যেমন বাজারে অনেক বই পাওয়া যায় যেখানে বলা হয় ‘ত্রিশ দিনে ইংরেজী শিখুন’।
আরে বাবা ত্রিশ বছরেই যেখানে ইংরেজী শিখতে পারছেন না সেখানে ত্রিশ দিনে ইংরেজী শিখবেন, এটা কিভাবে সম্ভব? তাই দেরি না করে সিদ্ধান্ত নিন নিয়ম করে পড়বেন।
নিয়ম করে পড়তে বলছি তার মানে এই নয় যে শুধু ইংরেজী গ্রামার বা ক্লাসের পড়াই পড়তে হবে। ইংরেজী যে কোন বই, যা আপনাকে পড়তে আগ্রহী করে তোলে, পড়তে পারেন।
ক্লাসিক সাহিত্য, খবরের কাগজ, ছোট গল্প ইত্যাদি ইংরেজী ভাষায় লিখিত বই গুলো পড়ুন। প্রথম প্রথম কষ্ট হবে, পরবর্তীতে দেখবেন ঠিকই আনন্দ পাচ্ছেন। আর এভাবে একদিন ইংরেজীতে ভাল হয়ে যাবেন, নিজেও টের পাবেন না।
২) শব্দ ভাণ্ডার বাড়ানঃ
গোগ্রাসে সব পড়তে বললাম, কিন্তু পড়তে গেলেই প্রথমে যে সমস্যায় পড়বেন তা হল ভোকাবুলারি সংক্রান্ত সমস্যা।
প্রথম দিকে এই সমস্যাটি এতটাই প্রকট থাকে যে বেশিরভাগ মানুষ ইংরেজী চর্চা করতে গিয়ে বার বার হোঁচট খান এই শব্দার্থ না জানার জন্য।
শব্দ না জানা দোষের কিছু নয়, দোষের হল জানার চেষ্টা না করা। তাহলে কি করবেন এই জ্বালাতন থেকে রেহাই পেতে?
আমি যেটা করেছি তা হল, নিজে ছোট ছোট নোটবুক বানাতাম নতুন শব্দ লিখে রাখার জন্য। প্রতিদিন ইংরেজী পড়ার সময় যত নতুন শব্দের সম্মুখীন হয়েছি সবগুলোকে নিয়ম করে নোট করে নিয়েছি।
আপনারা এটা করতে পারেন। আরো ভালো হয় যদি নতুন জানা শব্দগুলো প্রতিদিনের কথোপকথনে ব্যবহার করতে পারেন।
৩) লেখার অভ্যাস করুনঃ
জানি এই কাজটি বেশ কঠিনই বটে। তবে একটা কথা সব সময় মাথায় রাখতে হবে, ‘কঠিন আর অসম্ভব এক জিনিস না’।
কঠিন হলেও প্রতিদিন কিছু কিছু লেখা অভ্যাস করুন। হয়ত অনেক ভুল হবে, তাতে কি? ভুল গুলো সিনিয়র কারো দিয়ে নিয়ম করে সংশোধন করে নিবেন।
তাছাড়া গ্রামার ভুল ধরার জন্য অনেক এপ্লিকেশন পাবেন, শুধু গুগল সার্চ দিলেই সামনে চলে আসবে।
৪) গ্রুপ ডিসকাশন:
ইংরেজী ভাষা রপ্ত করার জন্য গ্রুপ ডিসকাশন একটি অত্যন্ত কার্যকরী পন্থা। প্রতিদিন গ্রুপে গিয়ে যেকোনো টপিকের উপর আলোচনা করলে অনেক কিছু শেখা যায়।
বিশেষ করে গ্রুপ মেম্বারদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে পারেন, যেটা অনেকটা বিনে পয়সায় শিক্ষক পাওয়ার মতই ব্যাপার।
তাছাড়া এটা যেহেতু আলোচনা এবং গল্প আকারে পরিচালিত হয় সেহেতু এখানে আলসেমি কম হয়।
৫) একটু করে হলেও প্রতিদিন ইংরেজি বলা:
ইংরেজি যাদের মাতৃভাষা নয় তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল ইংরেজিতে কথা বলতে গেলে বাধাগ্রস্ত হওয়া।
অনেকের সাথেই কথা বলে যেটা জেনেছি তারা অনেক জানেন কিন্তু মুখে প্রকাশ করতে পারেন না।
এর সবচেয়ে বড় কারণ হল জড়তা এবং না বলার অভ্যাস। অনেকটা এরকম “পেটে আসছে কিন্তু মুখে আসছে না।”
প্রতিদিন নিয়ম করে ইংরেজি বললে একটা সময় ফ্লুয়েন্সি আসবেই। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা তাহলো কথা বলার সঙ্গী খুঁজে বের করা।
তবে এখন ইন্টারনেটের বদৌলতে এ কাজটি অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে।
একটু চেষ্টা করলেই বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপে অনায়াসেই সঙ্গী পেতে পারেন যারা বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
৬) উচ্চারণ যতটা সম্ভব শুদ্ধ রাখার চেষ্টা করুন:
এটা ঠিক যে নন নেটিভদের উচ্চারণ সাধারণত নেটিভ দের মত হয়না। তবে উচ্চারণ যতটা সম্ভব শুদ্ধ রাখার চেষ্টা করা উচিত।
এতে করে আপনি অতি সহজেই ইংরেজি ভাষা বুঝতে পারা সহ অন্যদেরকেও বোঝাতে পারবেন। ভানু চরণ শেখার জন্য ইউটিউবে প্রচুর মেটেরিয়াল পাওয়া যায়।
৭) ডিকশনারি সাথে রাখুন:
ইংরেজি ভাষা চর্চার ক্ষেত্রে কাছে সবসময় একটা ভালো মানের ডিকশনারি রাখা বাঞ্চনীয়।
হাতের কাছে একটা ডিকশনারি থাকার অর্থ হলো আপনি কখনো ইংরেজি শব্দে আটকে যাবেন না।
বিষয়টি আজকের দিনে অনেকটাই সহজ। কারণ এখন প্রায় প্রতি প্রত্যেকেই স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে থাকেন, যেখানে ইংরেজি ডিকশনারির বেশ ভালো কিছু অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে।
৮) ভিডিও দেখুন/পডকাস্ট শুনুন:
ইংরেজি ভাষা শিক্ষার জন্য যতগুলো ভালো পথ রয়েছে তার মধ্যে ভিডিও দেখা ও পডকাস্ট শোনা অন্যতম পন্থা বলেই আমি মনে করি।
এটা নিয়মিত করতে পারলে আপনার ভাষা দক্ষতা খুব দ্রুত উন্নত হবে। বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস সহ অনেক রেডিও নিয়মিত পডকাস্ট প্রচার করে থাকে। আপনি চাইলে লাইভ অথবা ডাউনলোড করেও শুনতে পারেন।
আর ভিডিওর জন্য এখন পর্যন্ত আমার কাছে ইউটিউব সবচেয়ে ভাল মাধ্যম বলেই মনে হয়। তবে এর পাশাপাশি এখন নেটফ্লিক্স এর মত অনেক প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠেছে। সেগুলোও ব্যবহার করতে পারেন।
ইংরেজি ভিডিওগুলোর মধ্যে আমার প্রথম পছন্দ tedtalk বা উদ্বুদ্ধ করে এমন সংক্ষিপ্ত ভিডিও। আপনি চাইলে ইংরেজি মুভি এবং টিভি সিরিজও দেখতে পারেন।
৯) সাথে একটা ডায়েরি রাখুন:
সাথে একটা ডায়েরি রাখতে পারেন, যেখানে প্রতিদিন আপনার আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো সংক্ষিপ্তাকারে ইংরেজিতে লিখতে পারেন।
এতে আপনার ইংরেজি ভাষায় নিজেকে প্রকাশ করার ক্ষমতা বাড়াবে।
১০) মোটিভেশন ধরে রাখুন:
যে কোন ভাষা শেখার জন্য মোটিভেশন খুবই দরকারি। কখনও হতাশ হলে চলবেনা। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো পর্যন্ত নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই।
এজন্য একটা নির্দিষ্ট গোল ঠিক করে নিতে পারেন, এবং সে অনুযায়ী আস্তে আস্তে করতে পারেন।
১১) ইংরেজিতে চিন্তা করুন:
সংক্ষেপে যদি বলি, যা কিছু করছেন, ইংরেজিতে করুন। পেপার পড়লে ইংরেজি পেপার, মুভি দেখলে ইংলিশ মুভি, গল্প পড়লে ইংরেজি গল্প।
এমন কি যখন যা কিছু করছেন, ইংরেজিতে চিন্তা করুন। ধরে নিন আপনি এখন পরিকল্পনা করছেন আগামীকাল কি কি করবেন, সেগুলো ইংরেজিতে করুন।
আরেকটি ব্যাপার, অনুবাদ করার চেষ্টা করবেন না। ইংরেজি প্রাকটিস করার সময় ইংরেজিতেই ভাবুন। সব সময় ইংলিশ টু ইংলিশ ডিকশনারী ব্যবহার করবেন।
১২) ভুল করতে ভয় করবেন না:
অনেকে লক্ষ্য করেছি ইংরেজি বলা বা লেখার সময় ইতঃস্তত বোধ করেন। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলে বলেন ভয় লাগে যদি ভুল হয়।
যেহেতু ইংরেজি আপনার নিজের ভাষা নয় ভুল তো হবেই। বারবার ভুল না করলে আপনি শিখবেন কিভাবে?
তারপর একটা সময় দেখবেন আপনার ভুলের পরিমাণ আস্তে আস্তে কমে আসছে।
এটা ডিপেন্ড করবে আপনি কত বেশি প্র্যাকটিস করছেন এবং শেখার প্রতি আপনার কতটা আগ্রহ আছে তার উপর।
অতএব ভুলের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে প্রস্তুতি শুরু করুন।