অধ্যবসায় রচনা সকল শ্রেনীর জন্য

-Advertisements-

অধ্যবসায় রচনা সকল শ্রেনীর জন্য

অথবা, ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব

ভূমকা :

কোনাে কাজে সাফল্য অর্জনের জন্য বার বার চেষ্টা করার মহৎ প্রবৃত্তিকে বলা হয় অধ্যবসায়। অধ্যবসায় ছাড়া পৃথিবীতে। কোনাে মহৎ কাজ সম্পন্ন করা যায় না। মানুষ আজ পর্যন্ত যতগুলাে অভ্যাস আয়ত্ত করেছে তার মধ্যে অধ্যবসায়ই সর্বশ্রেষ্ঠ। এর। ফলে মানুষ অসাধ্যকে সাধ্য ও অসম্ভবকে সম্ভব করতে পেরেছে। কাজেই এটা মানুষের আত্মোন্নতির সর্বাপেক্ষা নির্ভরযােগ্য সােপান।

-Advertisements-

অধ্যবসায়ের অঙ্গসমূহ :

পরিশ্রম, ধৈর্য, উদ্যম, অভিনিবেশ ও সংকল্পের দৃঢ়তা অধ্যবসায়ের অঙ্গ। কোনাে মহৎ কাজ সাধন করতে হলে মানুষকে এ বিশিষ্ট গুণগুলাের অধিকারী হতে হয় ।

অধ্যবসায়ই আত্মপ্রতিষ্ঠার হাতিয়ার : অধ্যবসায়ের বলেই পৃথিবীতে মানুষের আত্মপ্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে। আদিম বন্য মানুষ বির প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে সংগ্রাম করেই পৃথিবীর বুকে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হয়েছে। সমুদ্রের জলােচ্ছাস, ভূ-কম্পন, ঝড়, ঘূর্ণিবাত, অগ্ন্যুৎপাত ও হিংস্র শ্বাপদের আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে মানুষ কী কম মূল্য দিয়েছে? এসবকে অতিক্রম করার মধ্যে অধ্যবসায় ছিল বলেই মানুষ আজও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় নি। বরং সে প্রকৃতিকে অনেক পরিমাণে জয় করতে পেরেছে। জীবনের সবক্ষেত্রেই অধ্যবসায়ের জয়। কী বিজ্ঞানে, কী সাহিত্যে, কী দর্শনে, কী শিল্পকলায়, কী বিদায়, কী উপাসনায়, কী সাংসারিক শ্রীবৃদ্ধিতে, কী সামাজিক উন্নতিতে, কী ব্যবসায়-অধ্যবসায় ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়। অটল অধ্যবসায় ঋষির তপস্যারই নামান্তর।

বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অধ্যবসায় :

পৃথিবীর প্রতিটি বৈজ্ঞানিকের আবিষ্কারের পশ্চাতে রয়েছে অধ্যবসায়ের উজ্জ্বল ভূমিকা। মানুষ বিদ্যুৎ আবিষ্কার করে দূর করেছে আঁধার, বিমান আবিষ্কার করে জয় করেছে আকাশ, রকেটের সাহায্যে অর্জন করেছে চন্দ্রবিজয়ের গৌরব। আর এসব সাফল্যের পেছনে কাজ করেছে মানুষের যুগ-যুগান্তরের সাধনা আর অবিরাম অধ্যবসায়।

আরও দেখুনঃ বিজ্ঞানের জয়যাত্রা অথবা দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা

-Advertisements-

অধ্যবসায়ীর দৃষ্টান্ত :

অধ্যবসায়ের বলেই জগতের মানুষ কত কাজ সম্পন্ন করেছে তা বলে শেষ করা যায় না। হযরত মুহম্মদ (স), মহাকারুণিক গৌতম বুদ্ধ, যীশুখ্রিস্ট ও শ্রীকৃষ্ণের সত্য ধর্ম প্রচারের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম ও সাধনার খবর কে না জানে? স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস অধ্যবসায়ের জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। মাকড়সার অধ্যবসায়ের উদাহরণ তাঁকে উদ্দীপনা দিয়েছিল। পরপর ছয়বার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তিনি দেখলেন যে, মাকড়সা তার কড়িকাঠে সূত্র স্থাপনের চেষ্টার সপ্তমবারে কৃতকার্য হয়েছে। এটা দেখে তিনি শিক্ষালাভ করেন এবং ইংরেজদেরকে সপ্তমবারে যুদ্ধ করে পরাজিত করতে সমর্থ হয়েছিলেন। পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অধ্যবসায়ের কী তুলনা আছে? দরিদ্র ব্রাহ্মণ সন্তান সুকঠোর সাধনার বলে উনবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বাঙালি সন্তানের সম্মান লাভ করেছিলেন। বৈজ্ঞানিক নিউটন বলেছেন, “আমার আবিষ্কারের কারণ আমার প্রতিভা নয়, বহু বছরের পরিশ্রম ও নিরবচ্ছিন্ন চিন্তার ফলই আমাকে সার্থক করেছে।” উইলিয়াম কেরী বাল্যকালে গাছে উঠতে গিয়ে পা ভেঙেছিলেন। ভালাে হবার পর তিনি আবার সেই গাছে ওঠার জন্য বার বার চেষ্টা করেন এবং এভাবে সকলের আগে গাছে আরােহণ করার ক্ষমতা অর্জন করেন। আমেরিকা আবিষ্কারক কলম্বাসের পেছনেও এমনি অধ্যবসায়ের দৃষ্টান্ত রয়েছে। তিনি সকল বাধা-বিপত্তিকে উপেক্ষা করে মাত্র ক’জন সঙ্গী নিয়ে সন্ত্র পাড়ি দিয়ে আকাঙ্ক্ষিত স্থানে উপনীত হয়েছিলেন। আব্রাহাম লিঙ্কন, বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন প্রমুখের জীবন ঐ একই সত্যের পরিচয় বহন করছে। জ্যোতির্বিদ গ্যালিলিও, বাষ্পীয়যন্ত্রের আবিষ্কারক জেমস ওয়াট, জর্জ স্টিফেনসন, চীনামাটির বাসন নির্মাতাবার্নার্ড প্যালিসি, উদ্ভিদের চেতনাশক্তি ও স্পন্দনতত্ত্বের আবিষ্কারক আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু ও বেতারের সার্থক আবিষ্কারক মার্কনির জীবন অধ্যবসায়েরই মাহাত্ম ঘােষণা করছে।

ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব :

ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব সর্বাধিক। ছাত্রজীবন আর অধ্যবসায় মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। বিদ্যার্জনের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। অলস, কর্মবিমুখ ও হতাশ ছাত্র-ছাত্রী কখনাে বিদ্যালাভে সফলতা অর্জন করতে পারে না। একজন অধ্যবসায়ী ছাত্র বা ছাত্রীকে হতাশ না হয়ে পুনরায় দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে অধ্যবসায়ে মনােনিবেশন করা উচিত। এ প্রসঙ্গে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন- কোনাে কাজ ধরে যে উত্তম সেইজন, হউক সহ বিয়ে ছাড়ে না কখন। শুধু অধ্যবসায়ই পারে ব্যর্থতার গ্লানি মুছে দিয়ে সাফল্যের পথ দেখাতে।

অধ্যবসায় ও উন্নত বিশ্ব :

উন্নত বিশ্ব আজ অধ্যবসায়ের বলে সাফল্যের চরম শিখরে পৌঁছেছে। জাপান, কোরিয়া, আমেরিকা, কানাডা কেবল অধ্যবসায়ের গুণেই উন্নতির শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে।

উপসংহার :

যাদের আত্মবিশ্বাস আছে কেবল তারাই স্ব স্ব অধ্যবসায় বলে জীবনে মহৎ কাজ সম্পন্ন করতে পারে। এ সংসারে জীবন সংগ্রামে জয়ী হতে হলে সমস্ত ভয়-ভাবনা দূর করে কর্মের মধ্যে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। প্রাণপণ পরিশ্রম করে যেতে হবে, পরাজয়কে অঙ্গের ভূষণ করে তুলতে হবে। হতাশা মানবজীবনের ধর্ম নয়, অধ্যবসায়ই পরম ধর্ম। একমাত্র অধ্যবসায়ী ব্যক্তিই পৃথিবীর বুকে কীর্তি স্থাপন করে অমরত্ব লাভ করতে পারে।

-Advertisements-

1 thought on “অধ্যবসায় রচনা সকল শ্রেনীর জন্য”

  1. -Advertisements-

Comments are closed.

-Advertisements-

You cannot copy content of this page